অসহায় ভালবাসা


একদা জীবনের সব আবেগ অনুভূতিগুলো ((ভালোবাসা, কষ্ট, সুখ, অহমিকা, ঐশ্বর্য্য, জ্ঞান এবং সময়)সমূদ্রের এক দ্বীপে অবসরে ভ্রমনে গেলো। তারা তাদের নিজেদের মতই ভালো সময় কাটালো। হঠাত করে ঝড়ের পূর্বাভাস ঘোষনা করা হলো এবং দ্বীপটি খুব দ্রুত খালি করতে বলা হলো। ঘোষনার সাথে সাথে সবার মাঝে ঘরে ফেরার তাড়া শুরু হয়ে গেল। সবাই নৌকার দিকে ছুটলো, খারাপ নৌকাগুলোও দ্রুত ভালো করা হলো।
এতকিছু পরও ভালোবাসা দ্রুত দ্বীপটি ছেড়ে যেতে অনীহা দেখালো। তখনই অনেক কিছু করার বাকি ছিলো। আকাশে হঠাত কালো মেঘ জমতে শুরু করলো। তখন ভালোবাসা বুঝতে পারলো যে দ্বীপটি দ্রুত ত্যাগ করার সময় এসে গেছে। কিন্তু ততক্ষনে সব নৌকা ছেড়ে চলে গিয়েছে। ভালোবাসা চারদিকে আশা নিয়ে তাকালো।
তখনই ঐশ্বর্য পাশ দিয়ে একটি আলিশান নৌকায় করে যাচ্ছিলো,
ভালোবাসা চিতকার করে বললো ঐশ্বর্য আমাকে কি তোমার নৌকায় নিতে পারবে?
ঐশ্বর্য বললো না, আমার নৌকা মূল্যবান সম্পদে পরিপূর্ণ, সোনা, রূপা দিয়ে ভর্তি সেখানে তোমার জন্য কোন জায়গা খালি নেই।
খানিকপরে অহমিকা যাচ্ছিলো একটি সুন্দর নৌকায় চড়ে। ভালোবাসা চিতকার করে বললো, তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবা?
অহমিকা বললো, না, তোমাকে নেয়া যাবেনা, তোমাকে নিলে আমার নৌকা তোমার পায়ের কাদায় নষ্ট হয়ে যাবে।
কিছুক্ষন পর দুঃখ পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, পুনরায় ভালোবাসা তাকে বললো তুমি কি আমাকে নিতে পারবা,
দুঃখ বললো না, আমি তোমাকে নিতে পারবোনা আমি অনেক কষ্টে আছি।
যখন সুখ পাশ দিয়ে যাচ্চিলো, ভালোবাসা তাকে ও বললো কিন্তু সুখ আনন্দে এত ব্যস্ত ছিলো চারদিকে তাকানোর সে প্রয়োজন বোধটুকু করলো না।
একটু পর ভালোবাসা ক্লান্ত ও মর্মাহত বোধ করতে লাগলো।
ঠিক সেই সময়ে কে যেন হঠাত করে ঢাকলো যে, ভালোবাসা আসো আমি তোমাকে সাথে নিবো।
ভালোবাসা বুঝতে পারলো না যে কে এত উদার হয়ে ডাকলো। সে দ্রুত লাফ দিয়ে নৌকায় উঠলো, নিরাপদ পৌছতে পারবে ভেবে স্বস্তি বোধ করলো।
নৌকায় উঠেই ভালোবাসা জ্ঞানকে দেখতে পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো “জ্ঞান তুমি কি জানো কে এত উদার হয়ে আমাকে সাহায্য করলো যখন কেউ আমাকে সাহায্য করলো না?”
জ্ঞান হেসে বললো, “ওহ, সময় তোমাকে ডেকেছে”
ভালোবাসা আরো আশ্চর্য্য হয়ে ভাবতে লাগলো যে, “কেন সময় তার জন্য থামলো, কেন তাকে নিরাপদ স্থানে পৌছে দেও্য়ার জন্য নৌকায় তুলে নিলো”
জ্ঞান বিজ্ঞের হাসি হেসে বললো, “একমাত্র সময়ই জানে তোমার মহানুভবতা এবং তোমার সামর্থ্য কি। শুধুমাত্র ভালোবাসাই পারে এই পৃথিবীকে সুখ এবং শান্তিময় করতে”।
এখান থেকে শিক্ষা হলোঃ যখন আমরা সম্পদশালী হই তখন ভালোবাসাকে এড়িয়ে যাই। যখন আমরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবি তখন ভালোবাসাকে ভূলে যাই। এমনকি সুখ ও দুঃখেও আমরা ভালোবাসাকে অনেক সময় ভূলে যাই।
শুধুমাত্র সময়ে আমরা ভালোবাসা অনুভব করি এবং এর গুরুত্ব বুঝতে পারি।
সুতরাং আর দেরি কেন, চলুন না আজ থেকে ভালোবাসাকে জীবনের একটু অংশ করে নেই।

Comments

Popular posts from this blog